“তারণকর্তৃ তারিণী তারা!”

Views: 102
4 0

“তারণকর্তৃ তারিণী তারা!”

 

(সাধক বামাক্ষ্যাপার তিরোধান তিথি উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ)

 

✍️সোমনাথ মুখোপাধ্যায়

নিকষ আঁধার রাত। বিস্তীর্ণ শ্মশানভূমির ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা নরকরোটি, মৃতদেহের অস্থি। প্রহরে প্রহরে শৃগালের ডাক। অদূরে ভরা কোটালে ফুলেফেঁপে ওঠা দ্বারকা নদী। তারাপীঠ মহাশ্মশানের পঞ্চমুন্ডীর আসনে শ্বেত শিমূলের তলায় ধ্যানমগ্ন সাধক। পরনে রক্তাম্বর। গলায় যজ্ঞপোবীতের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে রুদ্রাক্ষ ও অস্থির মালা। পাশেই ভূমিতে প্রোথিত ত্রিশূল। ইষ্টদেবী তারার একাগ্র সাধনায় মূলাধার থেকে একের পর এক চক্র ভেদ করে চলেছেন তিনি। এসে গেল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আজ্ঞাচক্রে জ্যোতি দর্শন। সহস্রদলে জগজ্জননী আদ্যাশক্তি তারা। চোখে তাঁর অপার করুণা। সাধকের চোখে আনন্দাশ্রু। মুখে “তারা তারা” অমৃত নাম। দাউদাউ করে জ্বলে গেল তাঁর সাধনার তেজে ক্রমশ শুষ্ক হয়ে যাওয়া শিমূল বৃক্ষটি। সিদ্ধ হয়েছেন তন্ত্রগুরু কৈলাসপতি শিষ্য মাতৃসাধক বামদেব। দিনটি ভাদ্র মাসের কৌশিকী অমাবস্যা যা তারা নিশি বলেও খ্যাত। এই তারা নিশিতেই সিদ্ধিলাভ করেন সাধক বামাক্ষ্যাপা। বাকিটা ইতিহাস। এরপর কত শীত, গ্রীষ্ম চলে যাবে। বর্ষায় ভেসে বসন্তে নতুন করে আনন্দে উদ্বেল হবে প্রকৃতি। আর সেই প্রকৃতির কোলে, তারাপীঠ মহাশ্মশানের পবিত্র মাটিতে বসে সংসার পাশে আবদ্ধ মুমুক্ষু, আর্ত মানুষকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলবেন আটলা গ্রামের সাত্তিক ব্রাহ্মণ সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও রাজকুমারী দেবীর সন্তান বামাচরণ। বলে দেবেন তারণকর্তৃ তারিণী তারা মায়ের কৃপা লাভের উপায়। তৈরি করবেন তারাক্ষ্যাপা, নিগমানন্দের মতো শক্তিশালী শিষ্যদের।

বামদেব ছিলেন বাকসিদ্ধ। পার্ষদ নগেন্দ্রনাথ বা ‘লগেন কাকাকে’ দেখিয়েছেন তাঁর অমোঘ শক্তি। “এ শালা তো এখুনি ফট্” বলা মাত্রই মৃত্যু মুখে ঢলে পড়েছে মুমূর্ষু রোগী। শ্যামনগরের মুলাজোড় ব্রহ্মময়ী কালীকে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ “ফুল লে মা, বেলপাতা লে মা” বলে পুজোয় ব্যঙ্গ করা তান্ত্রিকদের চমকে দিয়ে চোখের সামনে উচ্চরবে “তারা, তারা” বলে মায়ের আসন বেদী ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন নাদসিদ্ধ বামদেব। একান্ত সঙ্গী কালু নামে কুকুরকে পাহারা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শ্মশানে শুইয়ে রাখা মৃতপ্রায় শিশুকে বাঁচিয়ে তুলে দিয়েছেন তার পিতামাতার কোলে। শ্মশানের মাটি মাখার নির্দেশ দিয়ে সুস্থ করে দিয়েছেন কুষ্ঠরোগীকে। একাধারে জড়বৎ, বালকবৎ, উন্মাদবৎ ও পিশাচবৎ নামে চারটি ভাবের আধার সাধক বামাক্ষ্যাপার অগুন্তি লীলা। অমোঘ তাঁর আকর্ষণী শক্তি। অতুলনীয় তাঁর মানুষের প্রতি প্রেম। অপার তাঁর করুণা। কারণবারির প্রভাবে ঢুলুঢুলু চোখে, গাঁজার কলকে হাতে হাসিমুখে পথহারাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন পরম করুণাময় বামদেব।

 

৭৪ বছরে পা দিয়ে বুঝি মায়ের কোলে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ পেলেন মায়ের ক্ষ্যাপা ছেলে। তিনি বিভোর তাঁর বড়ো মা তারাতে। পঞ্চমুন্ডীর আসনে অন্তিম ধ্যান। মানসপটে মা তারা। তারা মা আদিগন্ত বিস্তৃত আকাশ। বামদেব ভক্তিরসের আধার মহাসাগর।

আকাশ ও সাগরের তুলনা চলে না। কিন্তু দিগন্তরেখায় দুইই এক হয়ে মিলে যায়!

 

 

 

 

 

 

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, রামানন্দ দাস, প্রতীক চ্যাটার্জী

ম্যানেজার – বুবুন মাইতি

এডিটর – দিব্যেন্দু দাস

এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা

Happy
Happy
1
Sad
Sad
0
Excited
Excited
4
Sleepy
Sleepy
0
Angry
Angry
0
Surprise
Surprise
0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *