চার যুগ ধরে স্বমহিমায় বদরিনারায়ণ

Views: 84
2 0

চার যুগ ধরে স্বমহিমায় বদরিনারায়ণ

 

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News

 

দেবতাত্মা হিমালয়ের বুকে পায়ে পায়ে তীর্থ। প্রতিটি তার নিজস্ব স্থান মাহাত্ম্য বহন করে। তেমনই চার যুগ ধরে স্বমহিমায় উজ্জ্বল উত্তরাখন্ড রাজ্যের চামোলি জেলার গাড়োয়াল হিমালয়ের বুকে ১০,৩৫০ ফুট উচ্চতায় জাগ্রত তীর্থ বদরিনারায়ণ। আক্ষরিক অর্থেই। প্রসিদ্ধ তীর্থ বদরিনারায়ণ যোগ ক্ষেত্র। মুক্তি ক্ষেত্রও বটে। নীলকণ্ঠ পর্বতের পাদদেশে নর ও নারায়ণ পর্বতের মাঝে অলকানন্দার ধারে অবস্থিত জগৎপালক নারায়ণের মন্দির বদরিনারায়ণ। লোকমুখে বদরিবিশাল। কথিত যে নর ও নারায়ণ রূপী দুই পাহাড় আদতে তপস্যারত স্বয়ং বিষ্ণু নারায়ণ। পৌরাণিক উপাখ্যান অনুযায়ী বদরি তীর্থে পান্ডবদের দ্বারা পূজিত হয়েছেন ভগবান বিষ্ণু নারায়ণ। বদরিনারায়ণ জগৎগুরু শঙ্করাচার্যের পদধূলিধন্য। কথিত যে এখানে লক্ষ্মীদেবীর দেওয়া বদরি ফল খান নারায়ণ। তাই তো যুগে যুগে এই তীর্থ বদরিনারায়ণ বলে খ্যাত। গাড়োয়াল হিমালয়ের বুকে পঞ্চ কেদারের মতোই যুগে যুগে মুক্তিকামী, মুমুক্ষু মানুষের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়ে আসছে তীর্থ বদরিনারায়ণ।

 

তপোভূমি ভারতবর্ষে কেদার- বদরি- গঙ্গোত্রী- যমুনোত্রী এই চার ধামের মধ্যে অন্যতম বদরিনারায়ণ। বদরিনারায়ণের প্রবেশদ্বার অলকানন্দা ও বিষ্ণুগঙ্গার সঙ্গমে বিষ্ণুপ্রয়াগ। বস্তুত এখান থেকেই বদরিকাশ্রমের শুরু। সেখান থেকে ৬,১৫০ ফুট উচ্চতায় জ্যোতির্মঠ বা যোশীমঠ, গোবিন্দঘাট হয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, দেবর্ষি নারদ, মহর্ষি ব্যাসদেবের তপস্যাস্থল বদরিনারায়ণে। এই যোশীমঠেই জগৎগুরু আচার্য শঙ্কর স্থাপন করেন শঙ্কর মঠ যা জ্যোতির্মঠ বলে খ্যাত।

স্কন্দপুরাণের কথায়, এই তীর্থ সত্য যুগে মুক্তিদাতা, ত্রেতায় যোগসিদ্ধিপ্রদা, দ্বাপরে বিশালা আর কলিতে বদরি অর্থাৎ চার যুগ ধরে বিরাজ করছেন বদরিনারায়ণ। জানা যায়, পঞ্চদশ শতাব্দীতে গাড়োয়ালের রাজা বর্তমান মন্দিরটি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে অষ্টাদশ শতাব্দীতে মন্দিরের চূড়া সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেন মহীয়সী নারী ইন্দোরের রাণী অহল্যাবাই হোলকর। তীব্র ঠান্ডা ও তুষারপাতের কারণে প্রতি বছর ভাতৃদ্বিতীয়ায় বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের দরজা। পূজারী রাওয়াল ফের মন্দিরের দরজা খোলে অক্ষয় তৃতীয়ায়। মাঝের সময়টা নারায়ণের পুজো হয় যোশীমঠে।

মূল্যবান মণিমাণিক্য খচিত ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট কালো কষ্টি পাথরের নারায়ণ পূজিত হন বদরিনারায়ণে। কাছে যাওয়া যায় না। রূপোর দরজা পার হয়ে খানিকটা দূর থেকেই পুজো, প্রার্থনা জানাতে হয় নারায়ণকে। নারায়ণের বাম দিকে রয়েছেন দেবী লক্ষ্মী এবং নর ও নারায়ণ ৠষি। ডান দিকে রয়েছেন কুবের ও উদ্ধব আর পাদদেশে বিষ্ণুবাহন গরুড়। মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে তপ্তকুন্ড, নারদকুন্ড, কূর্মধারা, প্রহ্লাদধারা ও ৠষিগঙ্গা নামের পাঁচটি গরম জলের কুন্ড। প্রবল ঠান্ডায় কুন্ডগুলিতে স্নান করেন অসংখ্য পুণ্যার্থীরা।

 

পৌরাণিক উপাখ্যান অনুযায়ী বৈবস্বত মনু দশ হাজার বছর তপস্যা করেন বদরিনারায়ণে। পরবর্তীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, দেবর্ষি নারদ, মহর্ষি ব্যাসদেব ছাড়াও এখানে তপস্যা করেন ব্যাসদেবের পুত্র শুকদেব, শিষ্য সৌতি, উদ্ধব ও গরুড়। বদরিকাশ্রমের বুকে বসুধারা গুহায় তাঁর সাধন আসনে বসে মহামতি ব্যাসদেব রচনা করেন মহাভারত, আঠারো পুরাণ, ভাগবত, পাতঞ্জল যোগ দর্শনের মহাভাষ্য, শতপথ ব্রাহ্মণ প্রভৃতি। আচার্য শঙ্কর রচনা করেন ব্রহ্মসূত্র, বিষ্ণু সহস্র নাম, দ্বাদশ উপনিষদ, মোহমুদগর প্রভৃতি অমূল্য গ্রন্থ। তাই তো যুগে যুগে বদরিনারায়ণের আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অপরিসীম। বিষ্ণু পুরাণের কথায়, এই তীর্থকে ছেড়ে নারায়ণ কখনোই কোথাও যান না! এই বদরিনারায়ণে জগৎপালক নারায়ণ ভূত ভবিষ্যত বর্তমান স্বরূপ। সর্বব্যাপক নিত্য পুরুষোত্তম মহাযশা পরমাত্মা স্বরূপ সনাতন যেখানে সমস্ত জগৎ সংসার, সমস্ত তীর্থ ও সমস্ত সিদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান।

জয় বদরিবিশাল।

 

 

 

 

 

 

 

 

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, রামানন্দ দাস, প্রতীক চ্যাটার্জী

ম্যানেজার – বুবুন মাইতি

এডিটর – দিব্যেন্দু দাস

এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা

Happy
Happy
0
Sad
Sad
0
Excited
Excited
1
Sleepy
Sleepy
0
Angry
Angry
0
Surprise
Surprise
0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *