৬৪টি দেশ ঘুরে বাইকে বিশ্ব জয় মীনাক্ষীর
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News

একা মোটরবাইকে পাড়ি দিয়ে এক বছরে বিশ্বের ৬৪টি দেশ ঘুরে আমি নারী আমিই পারি আপ্তবাক্য সত্যি করে দেখালেন অসমের গুয়াহাটি শহরের মীনাক্ষী দাস। আক্ষরিক অর্থেই দেখালেন যে বুকভরা সাহস, প্রবল জেদ, ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সব বাধা বিপত্তি দূরে সরিয়ে দিয়ে আপাত দৃষ্টিতে যা অসম্ভব তাকেও সম্ভব করে ফেলা যায়। দেখিয়ে দেওয়া যায় কাকে বলে নারীশক্তি। এশিয়া, ইউরোপ মিলিয়ে বিশ্বের ৬৪টি দেশ জয় করে স্বপ্নের সফর শেষে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে এলেন মীনাক্ষী দাস।

আরও পাঁচটি সাধারণ ঘরের মতোই গুয়াহাটির এক সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠেন মীনাক্ষী। গুয়াহাটিতেই বড়ো হওয়া, পড়াশোনা। কিন্তু মাত্র ১৬ বছর বয়সেই মোটরবাইকের প্রতি প্রগাঢ় প্রেম থেকে বাইক চালানো শেখা মীনাক্ষীর। আর স্বপ্ন দেখা বাইকে বিশ্ব ভ্রমণের। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। সামাজিক অনুশাসনের রক্তচক্ষু, অর্থের অভাব ইত্যাদি হাজারো বাধা। বিশ্ব ভ্রমণে প্রয়োজন প্রায় ৫৪ লক্ষ টাকা। পিছু হটেননি মীনাক্ষী। ২০১৯ সালে ফিটনেস ট্রেনার হিসাবে কাজ শুরু করেন নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চাওয়া দৃঢ় সংকল্পের মীনাক্ষী। কাজ করে ধীরে ধীরে টাকা জমাতে থাকেন। বিক্রি করে দেন নিজের কৃষিজমি। কিনে ফেলেন পছন্দের ইয়ামাহা বাইক। কিছু সহৃদয় মানুষের বাড়িয়ে দেওয়া আর্থিক সহায়তা নিয়ে ২০২৪ সালেই পাড়ি দেন বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতার মোটর পথ লাদাখ। চীন ছুঁয়ে পড়শি দেশ নেপাল হয়ে মুম্বই। এরপর ইরান, কাতার, বাহরিন প্রভৃতি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ হয়ে ইজরায়েল। এরপর একে একে তুরস্ক, গ্রিস, ম্যাসিডনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড প্রভৃতি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ভিসার মেয়াদ শেষ হলে ভারতে ফিরে নতুন করে ভিসা নিয়ে ফের পাড়ি দিয়েছেন অদম্য মীনাক্ষী।
তাঁর যাত্রাপথে বিভিন্ন ধরনের অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে মোটরবাইকে সফররত মীনাক্ষীকে। খরচ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন কোনোও হোস্টেলের বেসমেন্টে। প্রবল ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে পার্কেও রাত কাটাতে বাধ্য হন তিনি। গোনাগুনতি টাকা। ফলে আধপেটা খেয়ে, না খেয়ে পথ চলেছেন তিনি। চীনের কিছু মহিলা কয়েক হাজার ডলার সাহায্য করেন তাঁকে। ইজরায়েলেও সাধারণ মানুষের সাহায্য পান। নরওয়েতে এক বৃদ্ধ জুতো উপহার দেন মীনাক্ষীকে। ভাষার ব্যবধান থাকলেও হৃদয়ের নিজস্ব ভাষা যে কোনও ব্যবধান মানে না।
এক বছর ধরে ৬৪টি দেশ ঘুরে গুয়াহাটি ফিরেছেন মীনাক্ষী। টাকা যোগাড় করে ফের বাইকের এক্সিলারেটর ঘোরাবেন তিনি। এখনও যাওয়া হয়নি ওমান, ইরাক, মায়ানমার। বাকি আছে রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আসলে মীনাক্ষীরা হারতে শেখেননি। মীনাক্ষীরা হারেন না। পথ তাঁদের টানে। কোনোও বাধাই সেখানে বাধা নয়। অচেনাকে চিনতে চাওয়ার পাশাপাশি পথের বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা কত না অব্যক্ত হৃদয়ের নিজস্ব ভাষা তাঁদের পথে নামিয়েই ছাড়ে।
সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়,প্রতীক চ্যাটার্জী
ম্যানেজার – বুবুন মাইতি
এডিটর – দিব্যেন্দু দাস
এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা
