৪৮ ঘন্টায় রাত দিন – এও সম্ভব?
নম্রতা মুখার্জী, rong news
মহাকাশ, পৃথিবী বা ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি এই নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্নের অন্ত নেই। ছোটো প্রতিবেদনে এতটা লেখা সম্ভব না। তাই আজকে ছোট্ট একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা ও আলোকপাত করা হলো।
বিজ্ঞানীদের মতে, ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হয় ১,৩৭৭ কোটি বছর আগে। তার আগে সময় বলতে কি বোঝাতো?
আমরা যদি একটু ইতিহাস ঘাঁটি তবে দেখতে পাবো, ২০/৩০ বছর আগে অবধি বিজ্ঞানীরা বেশ গম্ভীর সুরে উত্তর দিতেন ” তার আগের কথা জিজ্ঞাসা কোরো না। কারণ বিন্দুসম জায়গা থেকে শুরু হয়েছিল স্থান (space) এবং কাল (time)। তার আগে কি ছিল সে সম্পর্কে আমরা অবগত নই।” এই কথা অনেকেরই ভালো লাগে নি কিন্তু একপ্রকার নিরুপায় হয়েই মেনে নিতে হয়েছিল কারণ সেই সময় আর কোনো সদুত্তর পাওয়া যায় নি। এরপর ৯০ এর দশক থেকে শুরু করে একদল বিজ্ঞানী কনাবিদ্যা (particle physics) কে নতুনভাবে দেখতে শুরু করলেন। তাঁদের মতে এই মহাবিশ্বের সূচনা লগ্নে অসীম শক্তি ছিল,এবং সমস্ত জায়গায় সেই শক্তি একেবারেই সমান ভাবে ছিল না – কোথাও কম আবার কোথাও বেশি। ইংরেজিতে এটিকে বলা হয় “Quantum Fluctuations”. এই Quantum Fluctuations এর থেকে একটু বেশি অংশ থেকেই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি হলো। অর্থাৎ Energy রূপান্তরিত হলো mass এ।
এই ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকালে প্রাণের সঞ্চার হয় বা প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায় মহাসাগরের জলে। এবার আমাদের জিজ্ঞাসু মনের প্রশ্ন আসবে, এই প্রাণ তাহলে জল থেকে ডাঙায় এলো কিভাবে? বিজ্ঞানী মহল থেকে উত্তর পাওয়া যায়, প্রতিদিন জোয়ারের জলের সাথে ভেসে আসত বহুকোশী জীবন। জোয়ারের জলের নেমে যেতো কিন্তু তারা ডাঙায় আটকা পড়ে মারা যেত। ধীরে ধীরে লক্ষ কোটি বছর ধরে এই বহুকোষী জীবন ডাঙায় থাকার ক্ষমতা অর্জন করে। এভাবেই বিভিন্ন উদ্ভিদ,প্রাণী এবং সর্বোপরি প্রাণের সৃষ্টি হয়।
বিভিন্ন পাঠ্য পুস্তক থেকে শুরু করে ছেলেবেলায় আমাদের বোঝানো হয় জোয়ার ভাটা হয় চাঁদের প্রভাবে। কিন্তু এই তথ্য পুরোপুরি সত্যি নয়। কারণ সূর্য পৃথিবীকে চাঁদের থেকে ১৩৭গুণ বেশি জোরে আকর্ষণ করে যার জন্য পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। তাহলে আমরা কেন বলি বা পাঠ্যবইতেই বা কেন লেখা হয় – চাঁদের জন্যই জোয়ার ভাটা হয়। জোয়ার ভাটা হয় চাঁদ ও সূর্য দুটোর জন্যই। চাঁদ পৃথিবীর জলকে যতটা আকর্ষণ করে সূর্য তার ৪৭ গুন বেশি আকর্ষণ করে, যে কারণে জোয়ার ভাটা হয়।
আরো একটি জিনিস জানলে আপনি অবাক হবেন, পৃথিবীর জীবনের ইতিহাসে এমনও দিন ছিল যখন পৃথিবী ৮ ঘণ্টায় একবার নিজের চারিদিকে ঘুরত অর্থাৎ একটি দিন হতো ৮ ঘণ্টায় আর এখন ২৪ ঘন্টা। আরও কয়েক লক্ষ কোটি বছর পরে এমন হতেই পারে পৃথিবীতে একটা দিন হবে ৪৮ ঘন্টায় অর্থাৎ ২৪ ঘন্টা দিন ও ২৪ ঘন্টা রাত। কিন্তু সেটা হবে কেন? চাঁদ পৃথিবীর জলকে আকর্ষণ করছে আবার চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করছে আর পৃথিবী ঘুরছে তার নিজের চারিদিকের উল্টোদিকে। এই উল্টো দিকে ঘোরার ফলে যে জলটা ফুলেফেঁপে উঠছে চাঁদের জন্যই সেই জল চাঁদের সঙ্গে সঙ্গে ভ্রমন করছে এবং পৃথিবীর এই উল্টো ঘূর্ণনের ফলে পৃথিবীর কেন্দ্রের সঙ্গে জলের একটি ধর্ষণ হচ্ছে। এই ঘর্ষণের ফলে পৃথিবীর ঘূর্ণন আস্তে আস্তে সীমিত হয়ে যাচ্ছে এবং তার প্রভাব হিসাবে দেখা যাচ্ছে ৩.৬ সেন্টিমিটার দূরত্বে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে চলে যাচ্ছে(প্রতি বছর গড়ে)। কয়েক লক্ষ কোটি বছর পর এই নিমিত্ত সংখ্যাটাই অনেক বেশি আকারে দেখা যাবে। এমন একটা সময় আসবে যখন আমরা আর পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ পর্যন্ত দেখতে পাবো না।
(তথ্য সংগ্রহ : youtube channel PODCAST WITH ARIJIT CHAKRABORTY by THE DIRECTOR OF M P BIRLA PLANATORIUM, KOLKATA & ASTROPHYSICISTS – DR. DEBIPRASAD DUARI)