রথযাত্রায় ফিরে দেখা শ্রীক্ষেত্রের শ্রী মন্দির
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News
জগন্নাথ মহাপ্রভুর রথযাত্রার আবহে পায়ে পায়ে ঘুরে দেখা শ্রীক্ষেত্র পুরীর শ্রী মন্দির। বিভিন্ন ধরনের সেবা, উৎসব, পুজোর রকমারি রীতিনীতি নিয়ে ১০৪২ থেকে ১১৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত নীলমাধব জগন্নাথ মহাপ্রভুর মন্দির আক্ষরিক অর্থেই এক বিস্ময়। একবার ফিরে দেখা সুপ্রাচীন সেই শ্রী মন্দির।
ওড়িশার রাজা অনঙ্গ ভীমদেবের শাসনকালে নির্মিত শ্রী মন্দিরের চারটি প্রবেশদ্বার। পূর্বে সিংহদ্বার, পশ্চিমে খাঞ্জাদ্বার বা ব্যাঘ্রদ্বার, উত্তরে হস্তিদ্বার ও দক্ষিণে অশ্বদ্বার। চারটি প্রবেশদ্বারের দ্বাররক্ষক বর্গী হনুমান, ফতে হনুমান, তপস্বী হনুমান ও কানপাতা হনুমান নামে চারজন হনুমান। শেষের জন কান পেতে রয়েছেন সমুদ্রের গর্জন যেন মন্দিরে প্রবেশ না করে! প্রবেশপথের মুখেই তাঁদের সকলের অবস্থান। গোটা মন্দির ঘিরে রয়েছে এক বিশেষ শব্দ নিরোধক প্রাচীর যা মেঘনাদ বলে খ্যাত! সেকালের অসামান্য প্রযুক্তি ও স্থাপত্যের নিদর্শন এই মেঘনাদ। বিমান, মুখশালা, ভোগমন্ডপ ও জগমোহন এই চার ভাগে মন্দির বিভক্ত। সিংহদ্বারের মুখে রয়েছে বিশেষ ধাতু নির্মিত অরুণ স্তম্ভ যার কোনোও ক্ষয় নেই। এতে মরচেও পড়ে না! এখানেই রয়েছে জগন্নাথদেবের আরেকটি মন্দির যিনি পতিতপাবন বলে খ্যাত। যাঁরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী নয় তাঁরা পতিতপাবনকে অনায়াসে দর্শন করতে পারেন। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে স্থাপত্যবিদ্যার আরেকটি নিদর্শন গরুড় স্তম্ভ। স্তম্ভের মাথায় গর্ভগৃহের বেদি থেকে অনেকটা উঁচুতে অবস্থান করছেন বিষ্ণুবাহন গরুড় অথচ যাঁর নজর কিন্তু সরাসরি জগন্নাথ মহাপ্রভুর শ্রীচরণে! জগমোহনের গর্ভগৃহে ১০০৮ মতান্তরে ১০৮ শালগ্রাম শিলার ওপর নির্মিত রত্নবেদিতে আসীন জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা। জগন্নাথের বামদিকে দন্ডায়মান দন্ডরূপী সুদর্শন। মন্দিরের চূড়াতেও রয়েছে সুদর্শন যা নীলচক্র বলে খ্যাত এবং এর ওপরে উড়তে থাকা ধ্বজা পতিতপাবন সর্বদাই ওড়ে বাতাসের গতির বিপরীতে! এছাড়াও পাখি দূরে থাক কোনোও বিমান পর্যন্ত মন্দিরের চূড়ার ওপর দিয়ে যেতেই পারে না! বিস্মিত হওয়ার বিষয় যে গোটা মন্দিরের কখনোই কোনোও ছায়া পড়ে না!
শ্রী মন্দিরের বিরাট চত্বরে ছড়িয়ে রয়েছে বট জগন্নাথ, সিদ্ধ গণেশ, লোকনাথ শিব, কপালমোচন শিব, পাতালেশ্বর শিব, মহালক্ষ্মী মন্দির। এছাড়াও রয়েছে সূর্য মন্দির, অনিন্দ্যসুন্দর রাধাগোবিন্দের সাক্ষী গোপাল মন্দির, নৃসিংহ মন্দির, একাদশীদেবী মন্দির, চৈতন্যদেবের চরণচিন্হ মন্দির প্রভৃতি। রয়েছে পুরীর অধিষ্ঠাত্রী দেবী কালীমাতা বিমলাদেবীর মন্দির। ফলে একইসঙ্গে পুরী যেমন বৈষ্ণব ক্ষেত্র তেমনই শক্তিপীঠও বটে! এখানে বিমলাদেবীর ভৈরব স্বয়ং জগন্নাথ।মন্দিরের ভিতরে রয়েছে আনন্দবাজার নামে সুবিশাল ফুডকোর্ট। জগন্নাথের প্রসাদ মেলে এখানে। আছে রান্নাঘর যেখানে মাটির হাঁড়ির ওপর হাঁড়ি চড়িয়ে রান্না হয় ছাপ্পান্ন ধরনের ভোগ! আশ্চর্যের বিষয় সবথেকে ওপরের হাঁড়ির খাবার আগে তৈরি হয় আর সবথেকে নিচেরটি সবার শেষে! রান্না করার সময় কোনোও গন্ধ পাওয়া যায় না! একমাত্র ভোগ নিবেদনের পরেই গন্ধ পাওয়া যায়! কথিত স্বয়ং লক্ষ্মীদেবীর তত্ত্বাবধানে জগন্নাথদেবের রান্না হয়! বিষ্ণুপুরাণের কথায়, জগৎপালক নারায়ণ শৃঙ্গার করেন বদরিনারায়ণে, আহারাদি করেন পুরীতে! তাই দিনে পাঁচবার ভোগ নিবেদন করা হয় তাঁকে।
প্রতি বছর রথযাত্রায় মন্দিরের সামনে বড়ো দান্ড বা বড়ো রাস্তা দিয়ে রথে চড়ে গুন্ডিচা মন্দিরে মাসির যাবেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। এটির নাম পান্ডু বিজয়। তার আগে স্বর্ণ সন্মার্জনি বা সোনার ঝাঁটা দিয়ে ছেরা পহেরা বা পথের ধুলো সাফ করে দেবেন পুরীর রাজা। গুন্ডিচায় সাতদিন ধরে চলবে পূজার্চনা। এরপর নীলাদ্রি বিজয় বা শ্রী মন্দিরে ফেরা। সেখানে স্বর্ণ বেশ, অধরপনা প্রভৃতি উৎসবের পর ফের গর্ভগৃহে রত্নবেদিতে অবস্থান করবেন তিনজন। জয় জগন্নাথ।
সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়,প্রতীক চ্যাটার্জী
ম্যানেজার – বুবুন মাইতি
এডিটর – দিব্যেন্দু দাস
এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা