অত্যাশ্চর্য যোগী লাহিড়ি মশাই
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News
দেবভূমি ভারতবর্ষ। তপোভূমি ভারতবর্ষ। আর সেই সনাতন ভারতের আধ্যাত্মিক জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রিয়াযোগী শ্যামাচরণ লাহিড়ির কথা কে না জানে! তৎকালীন ব্রিটিশ জমানার জিওলজিক্যাল সার্ভের কর্মচারী শ্যামাচরণ লাহিড়ি গৃহী সাধকের ভূমিকায় তাঁর অসামান্য যোগবিভূতির দ্বারা পথ দেখিয়েছেন অসংখ্য সংসার তাপদগ্ধ মানুষকে। এনে দিয়েছেন এক নতুন আনন্দময় জীবন। হয়েছেন যোগীরাজ। ফিরে দেখা সেই যোগীর অত্যাশ্চর্য জীবনকথা।
কুমায়ুন হিমালয়ের রাণীক্ষেতের দ্রোণগিরি পর্বতে মহান গুরু মহাবতার বাবাজি মহারাজের চরণপ্রান্তে বসে দ্রুত সাধনার বিভিন্ন স্তর অতিক্রম করে গুরুর নির্দেশে মানুষের মাঝে এলেন শ্যামাচরণ। চাকরি করার ফাঁকেই প্রকাশ পেতে থাকে তাঁর অসামান্য যোগবিভূতির বিচ্ছুরণ। তখন তিনি উত্তরপ্রদেশের মোরাদাবাদে। আজকের দিনে প্রকৃত যোগী আদৌ আছেন কিনা তা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে জোর তর্ক। শক্তিধর যোগীরা যে আজও আছেন তা প্রমান করতে বন্ধ ঘরে ধ্যানে নিমগ্ন হলেন শ্যামাচরণ। ঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে পাহারায় থাকলেন বন্ধুরা। কিছুক্ষণ পর শ্যামাচরণের নির্দেশে ঘরের দরজা খুলে হতবাক হন সেই বন্ধুরা! আসনে বসে রয়েছেন অনিন্দ্যসুন্দর চেহারার মহাযোগী মহাবতার বাবাজি মহারাজ! না কোনোও সূক্ষ্ম দেহধারী নয় সেই মহান যোগী এসেছেন স্থুল রক্ত মাংসের দেহে! নতিস্বীকার করে যোগীকে প্রণাম জানালেন শ্যামাচরণের বন্ধুরা। লুচি, মোহনভোগ নিবেদন করে চরণ বন্দনা করলেন সেই মহান যোগীকে।
আরেকবার বিহারের দানাপুরে অবস্থান করছেন যোগীরাজ শ্যামাচরণ। লোকমুখে তখন তিনি লাহিড়ি মশাই। প্রচুর ভক্ত, শিষ্য। তেমনই এক শিষ্যা কলকাতা থেকে গুরু দর্শনে দানাপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথে অনিচ্ছাকৃত দেরির জন্য হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে পারলেন না। চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল ট্রেন। মনের দুঃখে প্ল্যাটফর্মে বসে কেঁদেই ফেললেন তিনি। অবাক কান্ড! প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে কিছুটা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে সেই ট্রেন! যান্ত্রিক গোলযোগ। আশায় বুক বেঁধে কোনোও রকমে দৌড়ে গিয়ে উঠতেই ছেড়ে দিল ট্রেন। পরদিন গুরুর সাক্ষাৎ কালে স্নেহের সুরে শিষ্যাকে মৃদু বকুনি দেন লাহিড়ি মশাই। এত যার গুরুর প্রতি টান তাকে কি গুরু কাছে না এনে পারেন! তাকে আনবার জন্যই যে ট্রেন আটকে দিতে হলো!
তখন বারাণসীর বাঙালিটোলার বাড়িতে অবস্থান করছেন যোগীরাজ লাহিড়ি মশাই। ঘিরে রয়েছেন ভক্ত, শিষ্যদের দল। রয়েছেন বিশিষ্ট ভক্ত ডাক্তার চন্দ্রমোহন দে। তিনি বেঁচে আছেন কিনা তা প্রমান করতে নাড়ি পরীক্ষার জন্য হাত বাড়িয়ে দেন লাহিড়ি মশাই। অবাক হয়ে কবজি ধরে হতভম্ব হন ডাক্তারবাবু! নাড়িই নেই! তার মানে হৃদযন্ত্রে কাজ বন্ধ। অথচ মোটা গোঁফের ফাঁকে মিটিমিটি হেসে চলেছেন লাহিড়ি মশাই! বিজ্ঞান যেখানে শেষ অধ্যাত্ম বিজ্ঞান যে সেখান থেকেই শুরু!
সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়,প্রতীক চ্যাটার্জী
ম্যানেজার – বুবুন মাইতি
এডিটর – দিব্যেন্দু দাস
এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা
