হাত বাড়ালেই বন্ধু

Views: 39
1 0

হাত বাড়ালেই বন্ধু

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News

স্ত্রী সুশীলার কথা মতো বন্ধুর সঙ্গে দীর্ঘদিন বাদে দেখা করার উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়ে বাইরে পা রাখলেন তিনি। পরনে অতি সাধারণ বস্ত্র। গায়ে উড়ুনি। পায়ে কাষ্ঠ নির্মিত পাদুকা। সঙ্গে একটি ছোট্ট থলেতে বন্ধুকে দেওয়ার জন্য স্ত্রীর হাতে তৈরি সামান্য চিঁড়েভাজা। চিঁড়ে তার বন্ধুর খুবই প্রিয়। একবার পিছন ফিরে সেই ব্রাহ্মণ তাকিয়ে দেখলেন তাঁর খড়ে ছাওয়া মাটির ঘর। চরম দারিদ্র্যের ছাপ গোটা আঙিনা জুড়ে। ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস পড়ল একটা। ঘর তো ছাড়া হলো। কিন্তু পা যে আর সরে না। কোথায় তিনি আর কোথায় সেই শৈশব, কৈশোরের সাথী! একজন প্রবল বিলাস বৈভবের মাঝে, লোকজন পরিবৃত হয়ে শাসন করছেন। অন্যদিকে অপরজন প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছেন দারিদ্র্যের সঙ্গে। অবশ্য ব্রাহ্মণ তো চিরকালই দরিদ্র! ফলে ধনীর কাছে হাত পাততে আর অসুবিধা কোথায়!

পথ চলতে থাকেন বিপ্র। নন্দগাঁও থেকে পায়ে পায়ে পার হয়ে গেলেন কলস্বর জাগানো বেগবতী শ্রোতস্বীনি। আদিগন্ত বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর। ভাঙলেন পাহাড়ি পথের চড়াই উতরাই। মনে একরাশ চিন্তার জাল। বন্ধু কি আদৌ চিনতে পারবে তাকে। মনে পড়ছে সেই গুরুগৃহ সান্দীপনি মুনির আশ্রমে পাশাপাশি বসে বিদ্যা শিক্ষা। মনে পড়ছে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে যজ্ঞের অরণি সংগ্রহ করার ঘটনা। কিন্তু সে সব তো অতীত। বর্তমান যে বড়োই কঠিন। বন্ধু যে রাজা। বলা ভালো রাজাধিরাজ। তার সমকক্ষ কি ‘নুন আনতে পান্তা ফুরনো’ দারিদ্র্যের কশাঘাত খাওয়া এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ হতে পারে! কিন্তু তিনি যে বড়ো বন্ধুর ভক্ত। যাইহোক অবশেষে পথ শ্রমে শ্রান্ত, ক্লান্ত সেই বিপ্র পৌঁছে গেলেন পশ্চিম প্রান্তে সমুদ্রের তীরে চোখ ধাঁধানো জমকালো নগরী দ্বারকায়। সুউচ্চ তোরণের শীর্ষে উড়ছে নিশান। সমুদ্রের শান্ত ঢেউ বুঝি বা নতমস্তকে প্রণতি জানাচ্ছে নগরীর একছত্র অধিপতিকে!
প্রবেশদ্বারে সশস্ত্র প্রহরীর সামনে দাঁড়াতেই হলো। খবর গেল রাজদরবারে। মলিন পোশাকে, ধূলিধূসরিত পায়ে রাজার বন্ধু এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ দুয়ারে তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী! বিস্ময়ে বিমূঢ় ব্রাহ্মণ। তাঁর আগমনের খবর পেয়ে ছুটে আসছেন স্বয়ং দ্বারকাধীশ গোবিন্দ! একমুখ হাসি নিয়ে বাল্যবন্ধুকে উষ্ণ আলিঙ্গন করলেন রাজরাজেশ্বর যদুপতি শ্রীকৃষ্ণ। জল দিয়ে পা ধুইয়ে নিজের উত্তরীয় দিয়ে মুছিয়ে হাত ধরে দরবারে সিংহাসনের পাশে বসিয়ে কুশল বিনিময়। ভগবান মানুষের পা ধুইয়ে দিচ্ছেন! এও কি সম্ভব! হবে না কেন অতিথি যে দেবতা স্বরূপ। আর এই অতিথি যে ব্রাহ্মণ। ব্রাহ্মণ সেবা করতে যে কখনো পিছপা হননি দেবকীনন্দন বাসুদেব। কুন্ঠিত হয়ে চোখের জলে সেই চিঁড়েভাজা বন্ধুর হাতে তুলে দিলেন ব্রাহ্মণ সুদামা। তৃপ্তি করে সেই চিঁড়েভাজা গ্রহণ করলেন দ্বারকানাথ কেশব। শুনলেন বন্ধুর দারিদ্র্যের কথা। আশ্বাস দিলেন।

রাজ আতিথ্য গ্রহণ করে ঘরে ফিরে চললেন ভক্ত সুদামা। মনে দোলাচল। কিন্তু এ কী দেখছেন সুদামা! খড়ে ছাওয়া ঘরের বদলে দাঁড়িয়ে আছে মস্ত দালান বাড়ি! অর্থ, তৈজসপত্রের সে বাড়ি ভর্তি! এক গা গহনা পরে হাসিমুখে ঘরের কর্ত্রী হয়ে বসে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুশীলা! হে কৃষ্ণ তোমার এত দয়া, এত করুণা! তোমার ইচ্ছায় যে সব সম্ভব। তুমি যে সত্যিই ভক্তের ভগবান। তোমার দিকে এক পা এগুলে তুমি যে দশ পা এগিয়ে আস ভক্তের দিকে। শুদ্ধসত্ত্ব মনে ভক্তিভরে তোমাকে ডাকলেই যে তোমাকে সম্পূর্ণরূপে লাভ করা যায়। নরসমূহ তোমাকে আশ্রয় করে থাকে তাই তো তুমি নারায়ণ।
“যৎকৃপা ত্বমহে বন্দে পরমানন্দ মাধবম্!”

 

 

 

 

 

 

 

 

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় , প্রতীক চ্যাটার্জী

ম্যানেজার – বুবুন মাইতি

এডিটর – দিব্যেন্দু দাস

এডিটর ইন চিফ – ড: রাকেশ শর্মা

Happy
Happy
2
Sad
Sad
0
Excited
Excited
0
Sleepy
Sleepy
0
Angry
Angry
0
Surprise
Surprise
0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *