ইতিহাস সৃষ্টি করল কলকাতা: ৫ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনিত হলো গীতার শ্লোক, আধ্যাত্মিক চেতনার জোয়ার

Views: 25
0 0

ইতিহাস সৃষ্টি করল কলকাতা: ৫ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনিত হলো গীতার শ্লোক, আধ্যাত্মিক চেতনার জোয়ার

​দিব্যেন্দু দাস , রঙ নিউজ:

​আজ এক অভূতপূর্ব ও ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকল তিলোত্তমা কলকাতা। শীতের সকালে কুয়াশার চাদর সরিয়ে যখন সূর্যের আলো ফুটল, তখন ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড কার্যত পরিণত হয়েছিল এক বিশাল জনসমুদ্রে। উপলক্ষ্য— ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’ বা ‘পঞ্চ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ আজ সমবেত কণ্ঠে পাঠ করলেন শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা, যা এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করল।

​সকাল থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ দলে দলে ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সাধু-সন্ত, মঠ-মিশনের প্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষের ভিড়ে ময়দান চত্বর ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। সকলের পরনে ছিল ঐতিহ্যবাহী পোশাক। পুরুষদের পরনে ধুতি-পাঞ্জাবি এবং মহিলাদের পরনে শাড়ি— এই দৃশ্য এক অখণ্ড ভারতের সাংস্কৃতিক ঐক্যের বার্তা বহন করছিল।

​বিশিষ্ট অতিথিবর্গ ও তাঁদের বার্তা

​এই মহতি অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করেন স্বামী জ্ঞানানন্দজী মহারাজ (গীতা মণীষী মহামণ্ডল)। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাধ্বী ঋতম্বরা এবং সম্মানীয় অতিথি হিসেবে ছিলেন যোগগুরু বাবা রামদেব। এছাড়াও বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাগেশ্বর ধামের ধীরেন্দ্র কৃষ্ণ শাস্ত্রী। রাজ্যের রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোস এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠানের গরিমা বৃদ্ধি করেন।

​অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সুকান্ত মজুমদার এবং শমীক ভট্টাচার্য-এর মতো বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও, যারা সাধারণ ভক্তদের মতোই এই গীতা পাঠে অংশ নেন।

​অতিথিরা তাঁদের বক্তব্যে গীতার সর্বজনীন গ্রহণযোগ্যতার কথা তুলে ধরেন:

  • স্বামী জ্ঞানানন্দজী মহারাজ বলেন, “গীতা কেবল কোনো নির্দিষ্ট ধর্মের গ্রন্থ নয়, এটি মানবজীবনের এক পূর্ণাঙ্গ দর্পণ। আজকের এই সমবেত পাঠ বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা পৌঁছে দেবে।”
  • বাবা রামদেব যোগ ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনের উপর জোর দিয়ে বলেন, “সুস্থ দেহ ও প্রশান্ত মন গঠনে গীতার জুড়ি মেলা ভার। আজকের এই জনসমুদ্র প্রমাণ করে যে সনাতন সংস্কৃতি আজও কতটা জীবন্ত।”
  • সাধ্বী ঋতম্বরা নারীশক্তি ও ভক্তির প্রসারে গীতার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন।
  • ​আয়োজক কমিটির অন্যতম প্রধান মুখ কার্তিক মহারাজ (স্বামী প্রদীপ্তানন্দ) জানান, “এই আয়োজন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, বরং সমাজকে একতা ও শান্তির বার্তায় উদ্বুদ্ধ করাই এর মূল লক্ষ্য।”

​শব্দব্রহ্মের অনুরণন

​অনুষ্ঠানের শুরুতে শঙ্খধ্বনি এবং উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হয় গীতা পাঠ। ৫ লক্ষ মানুষের কণ্ঠে যখন একসঙ্গে উচ্চারিত হলো— “কর্মণ্যেবা অধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন…” তখন এক অদ্ভুত গাম্ভীর্য ও আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি হয়। শব্দব্রহ্মের সেই অনুরণন উপস্থিত সকলের মনে এক অনির্বচনীয় প্রশান্তি এনে দেয়।

​নিরাপত্তার দিক থেকেও পুলিশের পক্ষ থেকে ছিল কড়া ব্যবস্থা। এত বিপুল জনসমাগম সত্ত্বেও অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

​আজকের এই ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠ’ কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ছিল না, বরং এটি ছিল আধ্যাত্মিকতা ও ভারতীয় সংস্কৃতির এক মহা মিলনমেলা। অনুষ্ঠানের শেষে সমবেত জাতীয় সঙ্গীতে যখন ৫ লক্ষ মানুষ গলা মেলালেন, তখন দেশপ্রেম ও ভক্তির এক অপূর্ব সংমিশ্রণ প্রত্যক্ষ করল বিশ্ব। কলকাতা যে কেবল রাজনীতির শহর নয়, বরং আধ্যাত্মিক চেতনারও পীঠস্থান, আজকের এই অনুষ্ঠান তা পুনরায় প্রমাণ করল।

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় , প্রতীক চ্যাটার্জী

এডিটর – দিব্যেন্দু দাস

এডিটর ইন চিফ – ড: রাকেশ শর্মা

Happy
Happy
0
Sad
Sad
0
Excited
Excited
1
Sleepy
Sleepy
0
Angry
Angry
0
Surprise
Surprise
0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *