কালী তত্ত্ব ও কালীর রূপ রহস্য

Views: 90
1 0

কালী তত্ত্ব ও কালীর রূপ রহস্য

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News

“কালী করালবদনাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাম”- মায়ের এই রূপের কথা শাস্ত্রে আছে। সেই হৃদপদ্ম আলো করা কোটি সূর্যসম দক্ষিণাকালীর মাতৃভাবের পূর্ণ সপ্রকাশ রূপের কী তত্ত্ব, কী বা তার রহস্য তা নিয়েই আলোকপাত করতে চেষ্টা।
আগে মা কালী ছিলেন যন্ত্রে। যন্ত্রেই তাঁর রূপ কল্পনা করে পুজো হতো। মূলত তান্ত্রিক ও শক্তিসাধকদের মধ্যেই এই পুজো চলত। আর চলত একটা ভয় মিশ্রিত আবহ। ভয় কালীকে। ভয় তন্ত্রকে। নবদ্বীপের সুবিখ্যাত তন্ত্রসাধক বৃহৎতন্ত্রসার প্রণেতা কৃষ্ণানন্দ ভট্টাচার্য বা কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিলেন মা কালীকে। পরবর্তীতে এই দক্ষিণা কালীর রূপেই ভাবসাগরে ডুব দেবেন সাধক রামপ্রসাদ সেন, কমলাকান্ত ভট্টাচার্য, শিবচন্দ্র বিদ্যার্নব, গদাধর চাটুজ্যেরা! কিন্তু সে আলাদা বৃত্তান্ত। দেখার চেষ্টা করা যাক কালীর প্রকৃত রূপকে।

কালী নাম অতি প্রাচীন। মার্কন্ডেয় পূরাণ, বৃহদ্ধর্ম পূরাণে দেবী কালীর উল্লেখ আছে। কালী কে? না, কালকে যিনি হরণ করেন তিনিই কালী। তাঁর রূপ নেই।তিনি অরূপা। তিনি কালো। সারা বিশ্বব্রহ্মান্ড জুড়ে তিনিই। বিজ্ঞান স্বীকার করেছে ব্ল্যাকহোলের কথা। ওখান থেকেই সবকিছুর উৎপত্তি। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, কাল, সময় সবকিছু। এ এক অকল্পনীয় মহাশক্তি। এই স্ট্যাটিক বা স্থিরিকৃত শক্তিই মহাকাল শবরূপী শিব। আবার ডায়নামিক বা ক্রিয়ারূপ শক্তিই মহাকালী। এখানেই বিজ্ঞান ও অধ্যাত্মবিজ্ঞান এক হয়ে গিয়ে শিবারুঢ়া কালীর ধারণাগত উপলব্ধি। ওই কারণেই বলা হয় শিব ও শক্তি এক ও অভিন্ন। ওই উপলব্ধি থেকে মাতৃ সাধক রামপ্রসাদ সেন গাইলেন- “কালো মেয়ের আঁধার কোলে/শিশু রবি শশী দোলে/একটুখানি রূপের ঝলক/স্নিগ্ধ বিরাট নীল গগন”! দক্ষিণেশ্বরে মা ভবতারিণীর পূজারী যুগাবতার রামকৃষ্ণ পরমহংস বললেন,”তিনিই এক। তিনিই আবার বহু হয়েছেন।” তিনিই মহাকালের সঙ্গে বিরাজমানা মহাকালী। শিবের সঙ্গে শিবানী। তিনিই কালী, তারা, কমলা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, মাতঙ্গী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলারূপে দশ মহাবিদ্যা। তিনিই অখন্ডমন্ডলাকার আদিশক্তি। তিনিই আদ্যাশক্তি মহামায়া দেবী চন্ডী। তিনিই সব।
এ তো গেল কালীতত্তের কথা।

এবার কালীর রূপ নিয়ে আরোও একটু কথা। কালীর চার হাত বৃত্তের প্রতীক যা কিনা অখন্ডমন্ডলাকার পূর্ণের আভাস। কালীর কৃষ্ণবর্ণ ব্রহ্মাণ্ডের প্রতীক। বাম হাতে তাঁর কর্তরী বা খড়গ জ্ঞানের প্রতীক। তাই দিয়ে জীবের সব বন্ধন, পাশ কর্তন করছেন মা। আর এক হাতে বরাভয়। অসুরের ছিন্ন মুন্ড অবিদ্যার প্রতীক। গলায় মুন্ডমালা বর্ণমালার প্রতীক। তিনিই যে বিদ্যার বিদ্যা মহাবিদ্যা। কটিদেশে শবহাতের মেখলা। হাত কর্মের প্রতীক। জীবের কর্মফল ধারণ করছেন মা। লেলিহান রক্তবর্ণ জিহ্বা শুভ্র দন্তপংক্তি দিয়ে দংশন করছেন। অর্থাৎ রজোগুণকে সংহত করছেন সত্তগুণ দিয়ে। তাই তো তিনিই সব। যুগাবতার ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের কথায়, মা কালী তাঁর খড়গ দিয়ে জীবের সমস্ত পাশ কেটে ফেলছেন। অন্যদিকে বাবা মহাকাল শিব জীবের মুক্তির জন্য তার কানে দিচ্ছেন তারকব্রহ্ম মন্ত্র।
তাই কালী হলেন সব শব্দের সংহত রূপ ওঙ্কার। তিনিই ওঙ্কাররূপিনী সাক্ষাৎ পরমব্রহ্ম। পরিশেষে বলার, ‘কলৌ কালী, কলৌ কালী, কলৌ কালী ন সংশয়ঃ’ অর্থাৎ কলিযুগে কালীর নাম কালীর নাম কেবলমাত্র কালীর নামই শ্রেষ্ঠ, এ বিষয়ে কোনো সংশয় নেই! আর মায়ের পুজো। মায়ের পুজো বৈদিক মতেই বা কী আবার তন্ত্র মতেই বা কী? তিনি যে মা। ওই মা শব্দেই লুকিয়ে আছে সব তন্ত্র, মন্ত্র, বেদ, বেদান্ত, পুরাণ। তাই মায়ের পুজো হবে মায়ের মন্ত্রে। সঙ্গে থাকবে সন্তানের ভক্তিরূপ ফুল! নৈবেদ্য হবে দর্প, অহংকার, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা! পুজোর উপচার হবে অশ্রু আর আকুতি ভরা আকুল করা মা ডাক।
জয় কালী।

 

 

 

 

 

 

 

 

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, রামানন্দ দাস, প্রতীক চ্যাটার্জী

ম্যানেজার – বুবুন মাইতি

এডিটর – দিব্যেন্দু দাস

এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা

Happy
Happy
2
Sad
Sad
0
Excited
Excited
0
Sleepy
Sleepy
0
Angry
Angry
0
Surprise
Surprise
0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *