ঠাকুর বাড়ির অজানা পাকশালা

Views: 76
0 0

ঠাকুর বাড়ির অজানা পাকশালা

 

নবনীতা পাল:Rong News

 

উনিশ শতকের দিকে এক রহস্যময় পরিবার ছিল জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি। একদিকে যেমন সাহিত্য, শিল্প, সংস্কৃতি অন্যদিকে বাঙালির হেঁশেলও ছাড় পায়নি ঠাকুর বাড়ির পরিবারের সদস্যদের জাদু স্পর্শ থেকে। বাঙালি মানেই ভোজন রসিক ও ভোজন বিলাসী, ঠাকুর বাড়ির প্রত্যেক সদস্য সদস্যরা একদিকে যেমন খাঁটি বাঙালি ছিলেন, অপরদিকে ওনারা ছিলেন প্রতিভাবান পরীক্ষক, যাঁরা অনর্গল ও অহর্নিশি রান্নাবান্না নিয়ে গবেষণা ও পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। এই খাদ্য নিয়ে গবেষণা বিষয় ঠাকুর বাড়ির পুরুষ মানুষরাও বাদ যায়নি। ঠাকুর বাড়ির মহিলা মহলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঠাকুর বাড়ির রান্না বান্না নিয়ে গবেষণা করতেন বাড়ির পুরুষরাও। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজেই সর্বশ্রেষ্ঠ ভোজন রসিক খাঁটি বাঙালি ছিলেন এবং অবশ্যই সাহিত্য সংস্কৃতির সাথে সাথে উনি একজন রন্ধন বিষেশজ্ঞ ছিলেন। বিভিন্ন ধরণের নানান দেশী বিদেশী রান্নার আঁতুড় ঘর ছিল ঠাকুর বাড়ির রন্ধনশালা। এই সকল ঐতিহ্যবাহী ঠাকুর বাড়ি স্পেশাল রান্নাবান্না এবং তাদের প্রণালী একমাত্র লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন যে মানুষটি, তিনি হলেন কবিগুরুর ভ্রাতা হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী।তিনি ছিলেন ঠাকুর বাড়ির সর্বশ্রেষ্ঠ রন্ধন বিশেষজ্ঞা। ১৯০২ সালে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী প্রকাশিত “আমিষ ও নিরামিষ আহার” বইটির ৩ টি খণ্ড মিলিয়ে ঠাকুর বাড়ির অজানা ও অনাবিষ্কৃত সব রান্নাবান্নার পরিচয় পাওয়া যায়, যে সকল রান্না গুলি আজও সমাজের লোক চক্ষুর অন্তরালে। এমনকি পাঠক মহল থেকে শুরু করে রন্ধন শিল্পী, রন্ধন জগতের ব্যক্তিত্বরা, এমনকি গৃহস্থ বাড়ির হেঁশেল- সকলেই এই রান্না গুলো থেকে আজও বঞ্চিত। কারণ ১৯০২ সালের পর প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবীর বইটির পুনঃ সংস্করণ আর করা হয়নি। এমন অনেক ঠাকুর বাড়ির রান্না রয়েছে যা আজও লোক চক্ষুর।অন্তরালে। তখনকার সময়ে মানুষ সাধারণত সাধুভাষাতেই লিখে থাকতেন এবং রান্নার সামগ্রীর মাপ সিকি, আনা,তোলা, পো ইত্যাদিতে করা হতো। কিন্তু পাঠকদের সুবিধার্থে একটি রেসিপি ছবি সহ আধুনিক ভাষায় লিপিবদ্ধ করলাম।

 

 

রেসিপির নাম – ডুমুরের কুর্কিট

 

উপকরণ:- ডুমুর – ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ – ৬০ গ্রাম, আদা – ৬ গ্রাম, কাঁচা লঙ্কা – ২ টো, গোল মরিচ গুঁড়ো – ২ গ্রাম, গরম মশলার গুঁড়ো – ২ গ্রাম, নুন – ৩ গ্রাম, ঘি – ১০৫ গ্রাম, ময়দা – ১৫ গ্রাম, টকদই – ৩০ গ্রাম, সুজি – ৬০ গ্রাম, শুকনো লঙ্কা – ৩ টে

 

প্রণালী:- প্রথমে ডুমুর গুলো চারভাগ করে কেটে ধুয়ে ভেতর পরিষ্কার নিতে হবে। এরপর লোহার বাসন বা পাত্র ছাড়া যে কোন পাত্রে বা হাঁড়ি বা কড়াই তে ডুমুর গুলো সেদ্ধ করতে দিতে হবে এবং ২৫ মিনিট সেদ্ধ করে নিতে হবে। তারপর ডুমুর সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে জল ঝরিয়ে নিতে হবে এবং শিলে বেটে নিতে হবে। এরপর ৩০ গ্রাম পেঁয়াজ ও ৬ গ্রাম আদা শিলে বেটে নিতে হবে এবং বেটে রাখা ডুমুরের সঙ্গে এই পেঁয়াজ ও আদা বাটা ভালো করে মেশাতে হবে। তারপর বাকি ৩০ গ্রাম পেঁয়াজ স্লাইস করে কেটে নিতে হবে এবং কাঁচা লঙ্কা কুচি করে নিতে হবে। এরপর একটি কড়াই তে ১৫ গ্রাম ঘি গরম করে তার মধ্যে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে ৩ – ৪ মিনিট নাড়াচড়া করে পেঁয়াজ কুচি অর্ধ্যেক ভাজা হলে এর মধ্যে ময়দা দিয়ে দিতে হবে। তারপর ২ মিনিট বেশ ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে ময়দা বেশ লালচে হলে তার মধ্যে পেঁয়াজ ও আদা বাটা মিশ্রিত ডুমুর বাটা দিয়ে দিতে হবে এবং এই সময় নুন দিতে হবে। এরপর ৩ মিনিট ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে কষে নিয়ে এর মধ্যে গোল মরিচ গুঁড়ো ও গরম মশলা গুঁড়ো দিতে হবে এবং ১ ও ১/২ মিনিট মত নাড়াচাড়া করে পুর প্রস্তুত করতে হবে এবং পুর টা ভালো মত তৈরী হয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে। তারপর ডুমুরের মন্ড থেকে ঠিক পটোলের আকারের বা গড়নের লম্বা ধরণের কুর্কিট বানিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি পাত্রে টক দই, শুকনো লঙ্কা বাটা ও এক চুটকি নুন একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে এবং সুজি একটি আলাদা চ্যাপ্টা পাত্রে রাখতে হবে। তারপর প্রথমে এক হাতে কুর্কিট গুলো দই এর গোলায় ডুবিয়ে নিতে হবে এবং অন্য হাতে কুর্কিট গুলো সুজির ওপর ফেলে সুজি ভালোভাবে মাখিয়ে নিতে হবে। এরপর আবার কড়াইতে বা ফ্রাই প্যানে বাকি ঘি গরম করে কুর্কিট গুলো দিয়ে ৩ – ৪ মিনিট ভেজে নিতে হবে ( এক এক খোলা ভাজতে ৩ – ৪ মিনিট সময় লাগবে)। তাহলেই তৈরী হয়ে যাবে ঠাকুর বাড়ির অনবদ্য ও অজানা একটি অসাধারণ রেসিপি “ডুমুরের কুর্কিট”। এই কুর্কিট গরম গরম খেতে ভীষণ ভালো লাগে।

 

 

 

 

 

 

 

 

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, প্রতীক চ্যাটার্জী

ম্যানেজার – বুবুন মাইতি

এডিটর – দিব্যেন্দু দাস

এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা

Happy
Happy
0
Sad
Sad
0
Excited
Excited
0
Sleepy
Sleepy
0
Angry
Angry
0
Surprise
Surprise
0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *