রুদ্রাক্ষের মাহাত্ম্য অপরিসীম

Views: 131
3 0

রুদ্রাক্ষের মাহাত্ম্য অপরিসীম

 

সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News

 

রুদ্রাক্ষের মালা দেখেননি এমন মানুষ বিরল। যুগে যুগে, কালে কালে মুক্তিকামী সর্বত্যাগী সাধু সন্ন্যাসীরা তো বটেই পুরোহিত ব্রাহ্মণ থেকে গৃহী মানুষ অনেকেই ধারণ করেন রুদ্রাক্ষের মালা। বস্তুত রুদ্রাক্ষের মালার মাহাত্ম্য অপরিসীম। অনেককে আবার হাতেও রুদ্রাক্ষ বেঁধে রাখতে দেখা যায়।

এখন দেখা যাক কী এই রুদ্রাক্ষ? প্রধানত ভারতের গাড়োয়াল হিমালয়ের পাদদেশে পাওয়া যায় রুদ্রাক্ষ গাছ। এছাড়াও নেপালেও হিমালয়ের পাদদেশে দেখা মেলে এই গাছের। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম ইলাইওকারপাস গ্যানিট্রাস। সেই গাছের ফল হলো রুদ্রাক্ষ। খোসা ছাড়িয়ে বের করা হয় রুদ্রাক্ষ ফল। পরে তা শুকিয়ে মালা গেঁথে ধারণ করা হয়। মোট ৩০০ প্রজাতির রুদ্রাক্ষের মধ্যে প্রায় ৩৫টি প্রজাতির দেখা মেলে ভারতে।

কেন এই ফলের নাম হলো রুদ্রাক্ষ? রুদ্রাক্ষ নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন শিব। রুদ্র অর্থাৎ শিব। আর অক্ষি অর্থাৎ চোখ। বিশ্বাস যে স্বয়ং ভগবান শঙ্করের চোখের জলই হলো রুদ্রাক্ষ! রুদ্রাক্ষ শিবের অত্যন্ত প্রিয় বস্তু। সেই মন্দিরে শিব কখনোই অবস্থান করেন না যেখানে রুদ্রাক্ষ নেই! একটিমাত্র রুদ্রাক্ষ আছে এমন স্থানে অবশ্যই অবস্থান করেন ভগবান শঙ্কর।

এবার চোখ রাখা যাক রুদ্রাক্ষের বিভিন্ন রকম ও তার আধ্যাত্মিক গুণাবলীর ওপর। রুদ্রাক্ষের মাহাত্ম্য অপরিসীম। এর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব তাঁদের ইন্দ্রিয়াতীত শক্তির মাধ্যমে উপলব্ধি করেছেন প্রাচীন ভারতের ত্রিকালদর্শী ঋষিরা। তাঁদের মতে, রুদ্রাক্ষ ধারণকারী ব্যক্তি অন্ন, বস্ত্র ও অর্থ কষ্ট পায় না কখনো। সংসারে থেকেও পারমার্থিক কল্যাণ যারা চায় তাদের রুদ্রাক্ষ ধারণ করা উচিত। রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে আধ্যাত্মিক চেতনা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভক্তিভাবের বৃদ্ধি হয়। বিশ্বাস যে দেবাদিদেব মহাদেব রুদ্রাক্ষ ধারণকারীকে কখনোই ছেড়ে যান না। রুদ্রাক্ষ ধারণ করা অবস্থায় মৃত্যু হলে তার আর পুনর্জন্ম হয় না বলে বিশ্বাস। সাধারণত ১০৮ সহ ১টি রুদ্রাক্ষের মালা ধারণ করা হয়। রুদ্রাক্ষের বিভিন্ন মুখ হয়। সাধারণত এক থেকে চোদ্দ মুখী রুদ্রাক্ষ পাওয়া যায়। জানা যায় যে সব ধরনের রুদ্রাক্ষের ফল ও মাহাত্ম্য এক। তবে রুদ্রাক্ষের মুখের প্রকারভেদে কিছু বিশেষ ফল লাভ হয়। অতি দুর্লভ একমুখী রুদ্রাক্ষ। এই রুদ্রাক্ষ ধারণকারী ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করে। দুই মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে তার প্রতি সমস্ত দেব দেবী প্রসন্ন হন। ধারণকারী সর্বদা খুশি থাকে। তিন মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে খুশি হন স্বয়ং প্রজাপতি ব্রহ্মা। ধারণকারীর কখনো অগ্নি ভয় থাকে না। চারমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে রোগ আরোগ্য, ভগবত ভক্তি, ধন লাভ ও শুদ্ধ মনের অধিকারী হয়। একই ফল লাভ করা যায় সাতমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে। সহজে পাওয়া যায় পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ যা স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব। আসলে শিবের অপর নাম যে পঞ্চানন। এই পঞ্চ মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণকারীর সঙ্গে সর্বদাই বিরাজ করেন শিব। ছয় মুখী রুদ্রাক্ষ স্বয়ং সিদ্ধিদাতা গণেশ। সাংসারিক জীবনের পাশাপাশি পারমার্থিক জীবনেও সিদ্ধিলাভ করা যায় ছয় মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে। আট মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে খুশি হন মা গঙ্গা। নিত্য গঙ্গা স্নানের ফল লাভ করা যায় আট মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে। নয় মুখী রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ ধর্মরাজ। ধারণকারী কখনোই কোনো অধর্মের কাজে লিপ্ত হতে পারেন না। অতি দুর্লভ দশমুখী রুদ্রাক্ষ। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে দশদিকের দেবদেবীরা ধারণকারীর ওপর প্রসন্ন হন। কোনোও কঠিন ব্যাধিতে ভুগবে না কেউ যদি সে এগারো মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করে। বিরল বারো মুখী রুদ্রাক্ষ স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু। এই রুদ্রাক্ষের মধ্যে একইসঙ্গে অবস্থান করেন হরি ও হর। যে কোনো ধরনের সিদ্ধিলাভ হতে পারে তেরো মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে। চোদ্দ মুখী রুদ্রাক্ষ সমস্ত রোগ আরোগ্যকারী। ১০০০ রুদ্রাক্ষের মালা ধারণকারীকে প্রণাম করেন সব দেবদেবীরা। এই ১০০০ রুদ্রাক্ষের মালা ধারণ করতেন ভারত বরেণ্য মহাসাধক তৈলঙ্গস্বামী, গীর্ণারিবন্তের অদ্বৈত আশ্রমের মহাসাধক নাঙ্গাবাবা তোতাপুরী মহারাজ।

 

বস্তুত শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌরি, গাণপত্য যে ধরনের মন্ত্র দীক্ষাই হোক না কেন রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে অবশ্যই তা সুফলদায়ক। নিত্য পুজো, পাঠ, জপ, ধ্যান, হোম, যজ্ঞ, দান যাই করা হোক না রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে তা অবশ্যই দ্রুত ফল দেয়। দেবাদিদেব মহাদেবের চোখের জলে সৃষ্টি হওয়া রুদ্রাক্ষের তাই তো এত মাহাত্ম্য!

 

 

 

 

 

 

 

 

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়,প্রতীক চ্যাটার্জী

ম্যানেজার – বুবুন মাইতি

এডিটর – দিব্যেন্দু দাস

এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা

Happy
Happy
2
Sad
Sad
0
Excited
Excited
1
Sleepy
Sleepy
0
Angry
Angry
0
Surprise
Surprise
1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *