আহমেদাবাদ থেকে ওয়ার্ধা
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News
ট্রেন ছুটছে গুজরাট রাজ্যের মধ্যে দিয়ে। গন্তব্য আহমেদাবাদ থেকে ওয়ার্ধা। তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় সফররত যাত্রীদের মধ্যে এক বয়স্ক মানুষ প্রবল কাশছেন। সকলে তাঁর ছোঁয়া বাঁচিয়ে বসে। লোকটি দলিত। অর্থাৎ তথাকথিত নিচু জাতের! কাশতে কাশতে লোকটি একদলা কফ্ ফেললেন কামরার মেঝেতে। বাকি যাত্রীরা হইচই জুড়ে বয়স্ক লোকটির বাপবাপান্ত করায় যখন ব্যস্ত তখন একধারে ইংরেজি সংবাদপত্রে ডুবে থাকা রোগা চেহারার আপাত নিরীহ অথচ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন চেহারার একজন সেই সংবাদপত্রের থেকে খানিকটা কাগজ ছিঁড়ে কফ্ সাফ করে বাইরে ফেলে দিলেন।কিছুক্ষণ পর ফের কাশি। ফের কফ্ এবং ফের ওইভাবেই তা সাফ হলো। সকলে অবাক। এবার কেঁদে ফেললেন বয়স্ক লোকটি।কেন তিনি এক দলিতের কফ্ সাফ করছেন প্রশ্ন করতে স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর এল, তাঁর পিতা যদি এমন করতেন তবে কি তিনি দ্বিতীয়বার চিন্তা করতেন! হোক না তিনি দলিত! আসলে তিনি তো একজন মানুষ। ভগবান রামচন্দ্রের রাজত্বে যে সবাই সমান। চোখের জলে লোকটিকে নিজের বাপু বা পিতা বলে সম্বোধন করে বসলেন বয়স্ক মানুষটি। বাকিরা লজ্জায় মাথা নত। ট্রেন ওয়ার্ধা স্টেশন পৌঁছাতেই জাতীয় কংগ্রেসের পতাকা সজ্জিত একদল মানুষ ফুলের মালা পরিয়ে কফ্ সাফ করা লোকটিকে স্বাগত জানালেন। লোকটি কে? তিনি তৎকালীন ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির কার্যকরী সভাপতি মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। মানুষের জন্য প্রাণ কাঁদত তাঁর। এইভাবে ভাবতে পারার জন্যই তো তিনি জাতির জনক। এইভাবে কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা আসমুদ্র হিমাচল জাত, ধর্ম নির্বিশেষে মানুষকে ভালোবেসেই তো তিনি সকলের বাপুজি। ঈশ্বরের সৃষ্টি এক আকাশের নিচে সকল মানুষ সমান। এই তো ছিল তাঁর আদর্শের সনাতন ভারতবর্ষ। তাই তো তিনি মহাত্মা। সেই জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রণাম।
সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় , প্রতীক চ্যাটার্জী
এডিটর – দিব্যেন্দু দাস
এডিটর ইন চিফ – ড: রাকেশ শর্মা