জানেন কি প্রতিবছর দেবী দুর্গার বাহন কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?
✍️ দীপা দে ,রঙ নিউজ
হাতি, ঘোড়া, নৌকা ও পালকি এই চার বাহনেই দেবীর আগমন ও গমন হয়। দেবী কোন বছর কোন বাহনে আসবেন বা যাবেন তা নির্ধারণ করা হয় সপ্তমী ও দশমীর বার অনুযায়ী ।
দেবী দুর্গার বাহন সিংহ, – সাধারণ সময়ে এই বাহনে করেই দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে যাতায়াত করেন। তবে ভক্তদের আহ্বানে সিংহবাহিনী দুর্গা যখন শারদীয়া দুর্গোৎসবে মর্ত্যে আসেন, তখন প্রতিবছরই তাঁর আসা-যাওয়ার পথে থাকে ভিন্ন-ভিন্ন বাহন।
দেবী দুর্গার বিভিন্ন বাহনে আগমন ও প্রস্থান নানা শুভ ও অশুভ ইঙ্গিত বহন করে। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী দেবীর মর্ত্যে আগমন ও কৈলাসে গমনের বাহন কোন বছর কি হবে তার উপর নির্ভর করে গোটা মর্ত্যলোকের সারাবছর কেমন কাটবে ।
শাস্ত্র মতে, শারদীয়া দুর্গোৎসবে সপ্তমীর দিন দেবীর আগমন ও দশমীর দিন দেবীর কৈলাসে গমন। সপ্তমী ও দশমী সপ্তাহের কোন বারে পড়েছে তাঁর উপরে নির্ভর করে দেবী কোন বাহনে চড়ে মর্ত্যে আগমন ও কৈলাসে গমন করবেন। শাস্ত্র বলছে –
রবিশশী গজারূড়া,
শনিমঙ্গলে চ ঘোটকে।
গৌরশুক্রে চ দোলায়াং,
নৌকায়াং বুধবাসরে।
এই শ্লোক অনুযায়ী দেবী দুর্গার আগমন ও গমনের বাহন নির্ধারিত হয়। তাহলে হিসেবটা এমন –
* সপ্তমী রবিবার বা সোমবার হলে দেবীর হাতি বা গজে আগমন।
* দশমী রবিবার বা সোমবার হলে দেবীর হাতি বা গজে গমন।
* সপ্তমী শনিবার বা মঙ্গলবার হলে দেবীর ঘোড়া বা ঘোটকে আগমন।
* দশমী শনিবার বা মঙ্গলবার হলে দেবীর ঘোড়া বা ঘোটকে গমন।
* সপ্তমী বুধবার হলে দেবীর নৌকায় আগমন।
* দশমী বুধবার হলে দেবীর নৌকায় গমন।
* সপ্তমী বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার হলে দেবীর পালকি বা দোলায় আগমন।
* দশমী বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার হলে দেবীর পালকি বা দোলায় গমন।
শাস্ত্রমতে দেবী দুর্গার বাহনের তাৎপর্য –
গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা।
ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে।
দোলায়ং মড়কং ভবেৎ।
নৌকায়াং জলবৃদ্ধি শস্যবৃদ্ধিশ্চ।
হিন্দু শাস্ত্র মতে, একই বছরে দেবী দুর্গার আগমন ও গমন একই বাহনে সাধারণত হয়না। তবে যদি কোন বছর একই বাহনে আগমন ও গমন হয় তা মহাবিপর্যয় ও অত্যন্ত অশুভ ইঙ্গিত বহন করে।
ঘোটক/ঘোড়া, গজ/হাতি, দোলা/পালকি ও নৌকা দেবী দুর্গার এই চার বাহনের রয়েছে ভিন্ন-ভিন্ন তাৎপর্য।
* ‘গজে চ জলদা দেবী শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা ‘- শাস্ত্রমতে সর্ব উৎকৃষ্টতম বাহন হিসেবে বিবেচিত হয় গজ/হাতি। কারন হাতি সমৃদ্ধির প্রতীক। গজ/হাতিতে দেবীর আগমন বা গমন হলে সে বছর মহামারী, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ছাড়াই মর্ত্যলোক সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে ভরে উঠবে। পৃথিবী হবে শষ্যপূর্ণ । অর্থ্যাৎ অত্যন্ত শুভ ফল নির্দেশ করে।
* ‘ ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে ‘ – ঘোড়া ধ্বংসের প্রতীক। অর্থ্যাৎ দেবীর ঘোটকে আগমন বা গমন হলে সামাজিক , রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বেড়ে যাবে।চারদিক ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়বে। যা ধ্বংসাত্মক ও অত্যন্ত অশুভ ফল নির্দেশ করে।
* ‘ নৌকায়াং জলবৃদ্ধি শষ্যবৃদ্ধিশ্চ ‘ – দেবীর নৌকায় আগমন বা গমন হলে পৃথিবীতে অতিবৃষ্টি ও বন্যা হবে । কখনো কখনো ফসল ভালো হয়। মিশ্র ফল ইঙ্গিত করে।
* ‘ ‘ – অর্থাৎ দেবীর দোলায় আগমন বা গমন হলে পৃথিবীতে ভূমিকম্প ,খরা ও মহামারী দেখা দেবে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে। যা অত্যন্ত অশুভ ফল ইঙ্গিত করে।
সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় , প্রতীক চ্যাটার্জী
এডিটর – দিব্যেন্দু দাস
এডিটর ইন চিফ – ড: রাকেশ শর্মা