কালীর ১০৮ জবার মালা রহস্য
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News
বাঙালীর সম্বৎসরের মহোৎসব আশ্বিনে দুর্গাপুজোর পরেই কার্তিক মাসে দীপান্বিতা অমাবস্যায় পালিত হয় কালীপুজো। আর এই কালীপুজোর অত্যাবশ্যক উপচার হলো জবা ফুল। যে কোনও কালীপুজোয় দেখা যায় ১০৮ রক্তজবার মালায় সজ্জিতা দেবী কালিকা। কেন বেছে বেছে ১০৮টি জবা দিয়ে তৈরি মালা পরানো হয় মাকে? কেনই বা জবা ফুল ছাড়া কালীপুজো নিস্ফল সেদিকেই আলোকপাত করার চেষ্টা।
সমস্ত রকম ফুলের মধ্যে জবা একটি আলাদা স্থান অধিকার করে রেখেছে। প্রচলিত কাহিনী অনুসারে, একবার জবার অভিমান হয় যে পুজোয় সমস্ত ধরনের ফুল নিবেদন করা হলেও জবা কখনো নিবেদন করা হয় না। সে সরাসরি অভিযোগ করে স্বয়ং আদ্যাশক্তি মহামায়ার কাছে। যার কেউ নেই তার মা আছে বলে জবাকে সাদরে কাছে টেনে নেন আদ্যাশক্তি মহামায়ার দশ মহাবিদ্যার অন্যতম রূপ দেবী কালী। জবার ঠাঁই হয় মায়ের রাতুল চরণে। তবে এটি প্রচলিত কাহিনী মাত্র।
শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা অনুযায়ী, সাদা, গোলাপী, লাল ইত্যাদি বিভিন্ন রংয়ের জবার মধ্যে লাল বর্ণ বা রক্তজবা কালীপুজোয় অতি প্রশস্ত। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যায় জবা সাক্ষাৎ পরমা প্রকৃতি আদ্যাশক্তি মহামায়া দেবী কালিকা কারণ জবা যন্ত্র পুস্প যা কিনা সৃষ্টির প্রতীক। জবার পাপড়ির সঙ্গে যেন কালীর লোল জিহ্বার মিল পাওয়া যায়। অন্যদিকে লাল রং সৃজন, স্নেহ ও ভালোবাসার প্রতীকের পাশাপাশি শৌর্য ও তেজস্বীতারও প্রতীক। মা কালী যেমন একদিকে শত্রু বিনাশকারিণী অসীম তেজস্বীনি রক্তপিপাসু ধ্বংসের প্রতিমূর্তি, তেমনই অন্যদিকে তিনি সৃষ্টি, মায়া মমতা, ভালোবাসা সহ ভক্তকে অভয়দানকারিণী স্নেহময়ী বিশ্বজননী জগত্তারিণী জগদম্বা। এখানেই জবা ফুলের সার্থকতা। ফলে জবা ছাড়া কালীপুজো আক্ষরিক অর্থেই নিস্ফল।
এর পাশাপাশি ১০৮ সংখ্যাটির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব অসীম। শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যায় ১০৮ সাক্ষাৎ ব্রহ্ম। ব্রহ্মকে ভাঙলে সমগ্র বর্ণমালায় ব ২৩, র ২৭, হ ৩৩, ম ২৫ তম যাদের মিলিত যোগফল ১০৮। অন্যদিকে প্রাচীন সংস্কৃতে ৫৪টি বর্ণের প্রতিটির পুরুষ ও স্ত্রী লিঙ্গ থাকায় ৫৪ সংখ্যার দ্বিগুণ ১০৮। এছাড়াও মুহুর্ত শাস্ত্র অনুযায়ী, মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত ৩৬টি ধাপে বিভক্ত যাদের মিলিত যোগফল দাঁড়ায় ১০৮। আবার ব্রহ্ম ও ব্রহ্মময়ী এক ও অভিন্ন। ফলে কালকে হরণ করা, সমস্ত কারণের কারণ সাক্ষাৎ পরমা প্রকৃতি ব্রহ্মময়ী দেবী কালীর পুজোয় ১০৮ রক্তজবার মালার এত মাহাত্ম্য ও জনপ্রিয়তা।

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায় , প্রতীক চ্যাটার্জী
এডিটর – দিব্যেন্দু দাস
এডিটর ইন চিফ – ড: রাকেশ শর্মা
