“শেষ থেকে শুরু”

Views: 234
7 0

“শেষ থেকে শুরু”

 

✍🏾সোমনাথ মুখোপাধ্যায় ; রঙ নিউজ

 

একটিমাত্র তির! সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাতুল চরণে আঘাত। তীব্র বিষক্রিয়া। একশো পঁচিশ বছর বয়সে ধরাধামে তাঁর নর রুপে লীলা সংবরণ করতে চলেছেন বীরশ্রেষ্ঠ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। সাক্ষী রয়েছে আকাশ। সাক্ষী রয়েছে প্রভাস তীর্থের সমুদ্রতট। সাক্ষী রয়েছে বনের পাখিরা। আজ খুব মনে পড়ছে ধৃতরাষ্ট্র পত্নী গান্ধারীর অভিশাপ- স্বজনবান্ধবহীন অবস্থায় দীন হীন ভাবে তোমার দেহান্ত হবে কৃষ্ণ! আমি জানি তুমি কে! তুমি চাইলেই এই স্বজন হারানো কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ বন্ধ করতে পারতে। কিন্তু তা না করে তুমি যুদ্ধ হতে দিলে। তুমি তো মা নও! সন্তান হারানোর যন্ত্রণা তুমি কী করে বুঝবে? শত পুত্রের জননীর আকুল বুকফাটা বিলাপ আজও যেন মর্মে শেল হয়ে বিঁধছে! আর তাই তো ফলে গেল অক্ষরে অক্ষরে! সতীসাধ্বী নারীর অভিশাপ খন্ডন করার ক্ষমতা যে স্বয়ং ভগবানেরও নেই! চোখের সামনে অত বড়ো যদুবংশ ধ্বংস হয়ে গেল! অক্রুর, প্রদ্যুম্ন, ধৃষ্টকেতু, সাত্যকি বড়ো বড়ো সব বীরের মৃতদেহ ভূমিতে শায়িত। সামান্য বিষয় নিয়ে বচসার জেরে নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি থেকে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ। অস্ত্রগুলি নষ্ট হতে সমুদ্রতটে গজিয়ে ওঠা এরকা নামে লোহার দন্ড দিয়ে একে অপরকে আঘাত করা। সব শেষ। কিছুই করতে পারলেন না তিনি!

মনে পড়ছে সিংহাসনে বসে দিনের বেলায় শৃগালের ডাক আর রাত্রে কাকের কর্কশ ধ্বনি। পাপে পূর্ণ হয়েছে তাঁর প্রিয় দ্বারকা! মনে পড়ছে দ্বারকারাজ হিসাবে তাঁর অতি সুদর্শন পুত্র শাম্বের কথা। অত্যন্ত স্থুল রুচির পরিচয় দিয়ে ৠষির অভিশাপে পেট থেকে লৌহ মুষল প্রসব করেন শাম্ব! শ্রীকৃষ্ণের নির্দেশে সমুদ্র সৈকতে বসে সেই লৌহ মুষল পালা করে ঘষতে থাকলেন যাদবেরা। ক্ষইতে থাকল মুষল। লোহার রেণু জলের সঙ্গে মিশে এরকা দন্ডের সৃষ্টি হলো প্রভাসে যা আজকে শেষ করল তাঁর সমস্ত আত্মীয় পরিজনদের। আর ছোট্ট একটুখানি মুষলের টুকরো সমুদ্রে ফেলে দিলেন যাদবেরা। সবটাই তাঁর নির্দেশেই। একটি মাছ সেই টুকরোটি গিলে জেলের জালে ধরা পড়ল। সেটির পেট থেকে বেরুনো ঝকঝকে টুকরোটি সংগ্রহ করল জরা নামে এক ব্যাধ। পাখি শিকারের আশায় পাখি ভেবে তাঁর চরণেই চরম লক্ষ্যভেদ করল জরা। তাঁর মৃত্যুবাণ তিনি নিজেই যে প্রস্তুত করে রেখেছেন! কী যন্ত্রণা! আর সহ্য করা যায় না যে! একটু আগে জেষ্ঠ ভ্রাতা বলরাম যোগবলে দেহত্যাগ করেছেন। তাঁর মুখ থেকে সহস্র ফনা বিশিষ্ট সাপ বেরিয়ে সমুদ্রের জলে মিশে গিয়েছে। প্রাণত্যাগ করেছেন ভগবান শেষনাগ! আর তো কেউ রইলো না।

এসে গিয়েছে সেই অমোঘ মুহূর্ত। ফিরতে হবে স্বস্থানে। ফিরতে হবে তাঁর হ্লাদিনীশক্তি শ্রীরাধার কাছে। তিনি যে গোলোকে অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁর প্রানাধিকের জন্য। ওই তো দিব্য রথ এসে দাঁড়িয়েছে! দেবতারা এসে দাঁড়িয়েছেন নতমস্তকে। স্বয়ং জগৎপালক নরলীলা সংবরণ করছেন! একে একে দিব্য অস্ত্রগুলিও চলে গেল তাঁকে ছেড়ে। ওদের আর প্রয়োজন নেই। পায়ের কাছে বসে থাকা মরমে মরে যাওয়া জরাকে শান্তনা দিলেন। এ তো অদৃষ্ট। এ যে হওয়ার ছিল! জরার হাতেই যে তাঁর মৃত্যু লেখা! পূর্বজন্মে অযোধ্যানাথ রামচন্দ্রের কাছে তার পিতার হত্যাকারীকে হত্যা করতে চাওয়ার বর চেয়েছিল বালী পুত্র অঙ্গদ। ভক্তের ভগবান। পূরণ করলেন ভক্তের মনোবাসনা। ইহজন্মে তাই তো জরার হাতে মৃত্যু হতে চলেছে তাঁর! কথা বন্ধ হয়ে আসছে। একটা অব্যক্ত কষ্ট! সাগরের ঢেউ এখন নিস্তরঙ্গ। বনের পাখিরাও বোধহয় ডাকতে ভুলে গিয়েছে। শেষ হচ্ছে এক মহাজীবন! শেষ হচ্ছে একটি যুগ! চোখ বন্ধ হয়ে গেল তাঁর! চলে গেলেন তিনি। কিন্তু কোথায় যাবেন তিনি! ভক্তের হৃদয়ে তো তাঁর আসল অধিষ্ঠান। শুরু হলো দ্বাপর শেষে নতুন যুগ কলি। বলা ভালো শেষ থেকে শুরু!

দিব্য দেহ আগুনে পুড়ল না। অর্ধদগ্ধ অবস্থায় তা সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলেন সারথী দারুক। আর নিমকাঠের প্রকোষ্ঠে ভরে দেওয়া তাঁর নাভিপদ্ম ঢেউয়ের তালে ভাসতে ভাসতে এসে ঠেকল নীলাচল পুরীতে। সেটিই শরীরে ধারণ করে তিনি অধিষ্ঠান করছেন নীলমাধব জগন্নাথ মহাপ্রভু হয়ে। চন্দ্র সূর্য রূপ বড়ো বড়ো দুই চোখে ডাকছেন তাঁর ভক্তদের। সেই আকুল, প্রাণকাড়া ডাক এড়িয়ে যাবে এমন সাধ্য কার!

 

“জগন্নাথ স্বামী নয়নপথগামী ভবতূমে!”

 

 

 

 

 

সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, রামানন্দ দাস, প্রতীক চ্যাটার্জী

ম্যানেজার – বুবুন মাইতি

এডিটর – দিব্যেন্দু দাস

এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা

Happy
Happy
3
Sad
Sad
3
Excited
Excited
0
Sleepy
Sleepy
0
Angry
Angry
0
Surprise
Surprise
0

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *