সংসারে তুলসীর মাহাত্ম্য অসীম
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News
তুলসী গাছ নেই এমন সংসার বিরল। গ্রাম থেকে শহর, বাড়ির ছোটো উঠোন থেকে ফ্ল্যাটের এক চিলতে বারান্দা আর কোনোও গাছ না থাক এক কোনে অন্ততঃ একটি তুলসী গাছ শোভা পায়। এবার নজর রাখা যাক তুলসীর ওষধি গুণাগুণের প্রতি। তুলসী একটি ওষধি গাছ। বিজ্ঞানসম্মত নাম অসিমাম স্যাঙ্কটাম। সাধারণ সর্দি কাশি সারাতে তুলসীপাতার রস অব্যর্থ। বর্তমান সময়ে খাদ্যদ্রব্যের মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করা বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থের কুপ্রভাব দূর করতে পারে তুলসী। আজকের সীমাহীন দূষণের কারণে পরিবেশ রক্ষার জন্য তুলসীর হাওয়া অত্যন্ত ফলপ্রসূ।
এবার চোখ রাখা যাক তুলসীর আধ্যাত্মিক গুণাবলীর ওপর। সমস্ত দেবদেবীর মধ্যে সবথেকে শুদ্ধাচারী নারায়ণ। নারায়ণ পুজোর অতি আবশ্যিক উপচার হলো তুলসীপাতা। ওপরে ও নিচে তুলসীপাতা সহ সর্বদা নারায়ণের অবস্থান। অশুচি অবস্থায় তুলসী গাছ স্পর্শ করলে তা দ্রুত শুকিয়ে যায়। বস্তুত স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুই তুলসী গাছ। যে তুলসীকে ভালোবাসে তাকে নারায়ণও ভালোবাসেন। যেখানে তুলসী নেই সেখানে ভগবান বিষ্ণু নারায়ণ কখনো থাকেন না। ঘরে তুলসী গাছ থাকলে সংসারের অশেষ কল্যাণ হয়। দূর হয় আর্থিক কষ্ট। তুলসী গাছের গোড়ার মাটি গঙ্গা মাটির মতোই পবিত্র। যে কোনও শুভ কাজে তা ব্যবহার করা যায়। সমস্ত খাদ্যদ্রব্য শুদ্ধ হয় তুলসীর স্পর্শে।
তুলসীপাতার ডগায় অবস্থান করেন প্রজাপতি ব্রহ্মা, মাঝে বিষ্ণু আর বোঁটায় ভগবান শঙ্কর। তুলসীর ফুলে অবস্থান করেন দেবী লক্ষ্মী, সরস্বতী ও চন্ডী। শাখা প্রশাখায় অবস্থান করেন অন্যান্য দেবতারা। প্রতিদিন অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ হয় তুলসী গাছকে স্নান করালে। দুধ দিয়ে স্নান করালে লক্ষ্মী কখনোই সেই সংসার ত্যাগ করেন না। তুলসী গাছ প্রদক্ষিণ করলে তা স্বয়ং বিষ্ণুকেই প্রদক্ষিণ করা হয়। সমস্ত অকল্যাণ দূর হয় ঘরে এক টুকরো তুলসী কাঠ থাকলে। তুলসীকে দর্শন গঙ্গা ও গোদাবরী স্নানের সমতুল্য। তুলসী দর্শনেই চির পবিত্র নদী নর্মদা দর্শনের ফল লাভ হয়। স্বয়ং পুরুষোত্তম মর্যাদাপুরুষ রামচন্দ্র নিত্য তুলসীর পুজো করতেন।
এবার আলোকপাত করা যাক তুলসী মালা প্রসঙ্গে। সাধারণত পূর্ণিমা তিথি বা যে কোনও বৃহস্পতিবার তুলসী মালা ধারণ করা যায়। গলায় তুলসী মালা ধারণ করলে রজো ও তম গুণ নাশ করে সাত্ত্বিক গুণ বৃদ্ধি পায়। দেহ, মন পবিত্র হয়। এছাড়াও দেহ, মন, বাক্যের দ্বারা অর্জিত পাপের ফল নষ্ট হয়ে যায় তুলসী মালা ধারণে। তুলসী মালা ধারণ বা দর্শনে যে লজ্জা পায় সে নারায়ণের কৃপালাভে বঞ্চিত হয়। তুলসী মালা ধারণ করলে ভগবৎ ভক্তি বাড়ে। ধারণকারী কখনোই কোনোও পাপ কর্মে লিপ্ত হতে পারে না। মৃত্যুকালে দেহে তুলসী মালা থাকলে বিষ্ণুলোক প্রাপ্তি হয় বলে বিশ্বাস।
সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়,প্রতীক চ্যাটার্জী
ম্যানেজার – বুবুন মাইতি
এডিটর – দিব্যেন্দু দাস
এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা