কোন পুজোয় কী ফুল ও উপচার
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়:Rong News
যে কোনও ঠাকুরের পুজোয় অত্যাবশ্যক উপচার হলো ফুল। ফুলের সঙ্গে অন্যান্য আবশ্যক উপচারগুলি হলো বিল্বপত্র বা বেলপাতা, তুলসীপত্র বা তুলসীপাতা, দুর্বা ইত্যাদি। বর্তমান সময়ে জীবনযাত্রা যথেষ্ট কঠিন। সময় কম। ফলে পুজো অর্চনায় মানুষ সময় দিতে পারে না। কম সময়ে কোন পুজোয় কী ফুল ও উপচার প্রশস্ত সেই দিকেই আলোকপাত করা।
শিবের পুজোয় ধুতরো, আকন্দ, কল্কে ফুল প্রশস্ত। তবে একদমই নিষিদ্ধ কেতকী ফুল। শিবের পুজোয় সবসময়ই বেলপাতা প্রয়োজন। ফুল না হলেও চলবে কিন্তু ত্রিপত্র বা তিনফলক, দুইফলক বা একফলক হোক বেলপাতা দিতেই হবে। ছেঁড়া হোক ফাটা হোক বেলপাতা সবসময় শুদ্ধ। মাত্র একটি বেলপাতাতেই তুষ্ট বাবা মহাদেব। তবে সূর্য ও গণেশ পুজোয় বেলপাতা নিষিদ্ধ।
এবার আসা যাক নারায়ণের পুজো সম্পর্কে। নারায়ণ পুজোর অতি আবশ্যক উপচার হলো তুলসীপাতা। শালগ্রাম শিলার ওপরে ও নিচে সাদা চন্দন সহ তুলসীপাতা দিয়ে পুজো করতে হয়। নারায়ণের মূর্তি বা ছবি তুলসীপাতা সবসময় দিতে হবে। নচেৎ পুজো হবে নিষ্ফল। তবে বোঁটাবিহীন তুলসী পুজোয় অচল। এবার ফুল। যে ফুলের গন্ধ অত্যন্ত উগ্র বা সামান্য গন্ধটুকুও নেই এমন ফুল নারায়ণ পুজোয় চলে না। নারায়ণ পুজোয় কখনোই চলবে না জবাফুল। যে কোনও সাদা বা হলুদ ফুল দেওয়া গেলেও নারায়ণ পুজোয় শ্রেষ্ঠ ফুল হলো করবী তা সে শ্বেত বা রক্তকরবী যাই হোক না কেন। শক্তিসঙ্গম তন্ত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, এক হাজার, একশো বা একটি করবী ফুল দিয়ে নারায়ণের অর্চনা করলে মানুষ নারায়ণের মতোই রূপধারী হয় ও ত্রিলোকের সমস্ত দেবদেবীর পুজোর ফল লাভ করে। একমাত্র করবী ফুলেই নারায়ণ বাস করেন। যে কোনও দেবী বা শক্তির পুজোয় যেমন দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা, লক্ষ্মী, শীতলা, মনসা রক্তপুস্প বা লাল ফুল প্রশস্ত।কালীপুজোর শ্রেষ্ঠ ফুলই তো জবা। যন্ত্রপুস্প জবা সাক্ষাৎ দেবী কালিকা। অন্যদিকে দেবী সরস্বতীকে জবা নিবেদন করা গেলেও তাঁর প্রিয় ফুল হলো পলাশ।
এবার চোখ রাখা যাক দুর্বায়। যে কোনও পুজোয় অর্ঘ দেওয়ার সময় দুর্বা একটি প্রয়োজনীয় উপচার। বস্তুত দুর্বা ছাড়া পুস্পপাত্র সম্পূর্ণ নয়। তবে দুর্গাপুজোয় দুর্বা চলবে না। অন্যদিকে সিদ্ধিদাতা গণেশের অত্যন্ত প্রিয় দুর্বা। গণেশকে দুর্বার মালাও পরানো হয়। এ প্রসঙ্গে বলা যায় যে বেলপাতা, তুলসীপাতা, দুর্বা কখনো বাসি হয় না। একবার নিবেদনের পর পরের দিন ফের নিবেদন করা যায়। এ বিষয়ে আরও কিছু কথা। কখনোই জলে ধুয়ে ফুল নিবেদন করতে নেই। জলে ধুলে সেই ফুল নির্মাল্য বা আশীর্বাদী ফুল হয়ে যাওয়ার কারণে দেবদেবীরা তা গ্রহণ করেন না। এছাড়া দেবদেবীর গলায় পরানো ফুলের মালা পরের দিন খুলে ফেলতে হয়। দিনের পর দিন শুকনো মালা রাখা ঠিক নয়। এতে কর্মে বাধা ও সাংসারিক অশান্তির কারণ হয়। নখ দিয়ে বেলপাতা, তুলসীপাতা, দুর্বা কাটলে তা অশুদ্ধ হয়। পুজোয় লাগে না। তবে শরৎকালের অন্যতম ফুল শিউলি মাটিতে পড়ে থাকলেও শুদ্ধ। কুড়িয়ে এনে পুজো করা যায়। বাতাসেই শুদ্ধ হয় শিউলিফুল।
পরিশেষে ভারত বরেণ্য নিম্বার্ক সম্প্রদায়ের মহান বৈষ্ণব সাধক রামদাস কাঠিয়াবাবার সাক্ষাৎ শিষ্য ব্রজবিদেহী মোহন্ত সন্তদাস কাঠিয়াবাবার কথায়, নিত্যপুজোয় পুজকের মনে প্রফুল্লতা জন্মে এমন যে কোনও পুস্প ঠাকুরজিকে অর্পণ করা যায়। পুস্পের যে বিচার তা কাম্য পুজো সম্বন্ধে। নিত্যপুজোয় নয়।
সাব এডিটর – অনুরাধা ভট্টাচার্য্য শর্মা, সোমনাথ মুখোপাধ্যায়,প্রতীক চ্যাটার্জী
ম্যানেজার – বুবুন মাইতি
এডিটর – দিব্যেন্দু দাস
এডিটর ইন চিফ – রাকেশ শর্মা